কামরুল হাসান নিরব, ফেনী:
দীর্ঘ এক দশক পর ফেনীতে প্রকাশ্যে কর্মী সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির ফেনীর নেতাকর্মীরা। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২০০৮ সাল ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রকাশ্যে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি তারা। তবে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে এ ছাত্র সংগঠনটি। শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) জেলা শিবিরের আওতাধীন সকল ইউনিটের সদস্য নিয়ে কর্মী সমাবেশ করেছে সংগঠনটি। নেতারা বলছেন, রাজনৈতিক কোন উদ্দেশ্য নয়, দলের আদর্শ অনুযায়ী নিয়মনীতি মেনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করাই শিবিরের লক্ষ্য। দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেছেন ফেনী জেলা শাখার সভাপতি ইমাম হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক আবু হানিফ হেলাল।
দলের সাংগঠনিক বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে সভাপতি ইমাম হোসাইন বলেন, দীর্ঘদিন ফ্যাসিবাদ ছিল যার কারনে ছাত্র শিবির সরাসরি কার্যক্রম করতে পারেনি। তবে অভ্যন্তরীণ ভাবে ছাত্র শিবির সবসময় কাজ করেছে। নামাজ কাযা না করার পাশাপাশি ৪টি শর্ত মেনে চলতে হয়।
শিবিরের ফেনী জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু হানিফ হেলাল বলেন,
জেলা শিবিরের বর্তমানে সদস্য সংগ্রহ প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচি চলছে। আগামীতে
উপজেলা ও অঞ্চলভিত্তিক কর্মী সমাবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে। বন্যাকালীন সময়ে শিবিরের কর্মীরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে জেলাব্যাপী কাজ করেছে। আগামীতে ক্যাম্পাস পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণসহ নানা কর্মসূচি রয়েছে। বিগত ১৫ দিনে দাওয়াত পক্ষের কাজ ছিল আলহামদুলিল্লাহ অনেক সাড়া পাওয়া গেছে।
বিগত সময়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় শিবির প্রকাশ্যে কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। তবে শিবিরের সকল অভ্যন্তরীণ ইনডোর কর্মসূচি চলমান ছিল। বাইরে প্রকাশ্যে কর্মসূচি করতে না পারলেও সকল
উপজেলা ইউনিয়নে গোপনে সভা করেছে।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালের পর আমরা প্রকাশ্যে এমন বড় অনুষ্ঠান করতে পারেনি। দল সরাসরি কর্মসূচি না করলেও এখনও আমরা ভালো সাড়া পাচ্ছি।
কোন কর্মীর মনোবল নষ্ট হয়নি,
সংগঠন হিসেবে শিবির সবসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য করে। বর্তমানে আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে আমাদের
সংগঠনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার জন্য কাজ করছি।শিবিরের প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি ভয়ভীতি রয়েছে সেটি দূর করাই আমাদের লক্ষ্য। ছাত্র সংগঠন
হিসেবে শিক্ষা আন্দোলন, ধর্মীয় কর্মসূচি, আন্দোলন সংগ্রামসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে যে কর্মসূচি সেগুলো আমরা করতে চাই। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন জাতীয় রাজনীতির বিষয়। সেটি জামায়াত ইসলামী দেখভাল করবে, ছাত্র সংগঠন হিসেবে আমরা সেদিকের কোন বিষয়ে চিন্তা নেই। আমরা শিবিরের দাওয়াতি কার্যক্রম নিয়ে কাজ করছি। আমাদের সকল উপজেলায়, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে
কমিটি আছে আগে থেকেই। তবে এগুলো প্রকাশ্যে ছিল না, কিন্তু এখন আমরা প্রকাশ্যে কাজ করছি। শিবিরের বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে তিনি বলেন, সাংবিধানিকভাবে একটি ফরম পূরণ করলে কর্মী হওয়া যায়। তবে নামাজ, কোরআন পড়াসহ ৮টি কাজের প্রতিশ্রুতি দিতে হয়। ১৩টি বই আছে সেগুলো শেষ করতে হয়। একইভাবে সাথী হতে হলে ৩০টা বই আছে
দলের কর্মী সভায় যোগ দেন কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ
আল নোমান। সভায় অংশ নিয়ে কর্মীদের বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ক্রেডিট নিতে ব্যস্ত না থেকে ছাত্রদের অধিকার
বাস্তবায়নে ও কর্মীদের শিক্ষা দীক্ষায় যোগ্যতা অর্জন করার নির্দেশনা দেন তিনি। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সরকার অন্যায় প্রতিষ্ঠা করে আমাদের উপর নির্যাতন করে বাকস্বাধীনতা হরণ করেছে। ২০০৯ থেকে ২৪ সাল পর্যন্ত আমাদের উপর যে জুলুম নির্যাতন করেছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। যার জন্য আগামীতে
শিবিরের কর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে। মেধা, যোগ্যতা ও নৈতিকতা দিয়ে সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিতে কাজ করতে হবে। সভায় শিবির সভাপতি ইমাম হোসাইনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবু
হানিফ হেলালের সঞ্চালনায় আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন জেলা জামায়াতের আমির একেএম শামছুদ্দীন ও জেলা সেক্রেটারি আব্দুল হান্নান। এতে জেলার বিভিন্ন উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের শিবিরের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।