কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার কবিতায় বলেছেন, 'কাশফুল মনে সাদা শিহরণ জাগায়, মন বলে কত সুন্দর প্রকৃতি, স্রষ্টার কি অপার সৃষ্টি।' আবার কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রাচীন গ্রন্থ কুশজাতক’র কাহিনী অবলম্বন করে রচনা করেছেন শাপমোচন নৃত্যনাট্য। এভাবে বাংলা সাহিত্যে শরৎ ও কাশফুলের কথা এসেছে নানাভাবে।
প্রতিটি ঋতুরই রয়েছে আলাদা রূপ ও বৈচিত্র। ভাদ্র ও আশ্বিন মাস মিলে ষড়ঋতুর বাংলায় তৃতীয় ঋতু শরৎ। প্রকৃতি ধারাবাহিকতায় অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে আবারও এসেছে শরৎ। আর এই আগমনে চারিদিকে হাসছে কাশফুল। প্রকৃতিতে যখন শরৎকাল আসে তখন কাশফুলই জানিয়ে দেয় শরতের আগমনী বার্তা।
শরৎ মানেই নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, পালকের মতো নরম ও ধবধবে সাদা রঙে ফোটা কাশফুলের শুভ্রতা। কাশফুলের অপরূপ সৌন্দর্য পুলকিত করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। যদিও প্রকৃতি থেকে বিলুপ্তির পথে কাশবন। তবে কোথাও কাশফুল ফুটলে প্রকৃতি প্রেমিদের ঢল নামে সেখানে।
বরগুনা সদর উপজেলার গৌরিচন্না ইউনিয়নের লাকুরতলা এলাকার বরগুনা-বাকেরগঞ্জ সড়কে পেট্রোল পাম্পের ঠিক বিপরীতে পশ্চিম অংশের বালু ভরাট এক খন্ড জমি স্থানীয়দের কাছে মহাসড়ক নামে পরিচিত এলাকা ঢেকে গেছে কাশফুলে। সেখানে ঝকঝকে নীল আকাশে ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘের ভেলা প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে টানছে। সেইসাথে সড়ক দিয়ে আসা যাওয়া করা পথচারিদেরও মন কাড়ছে কাশফুল। পরিবার-পরিজন সহ দূরদূরান্ত থেকে আসছেন দর্শনার্থীরাও।
কেউ বসে গল্প করছেন। কেউ গুনগুন করে কবিতা আবৃত্তি করছেন, গান গাইছেন। কেউই অনুভূতিগুলো ক্যামেরায় বন্দি করতে ভোলেন না। কেউ কেউ ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করছেন। সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে ওইসব স্থানে প্রকৃতিপ্রেমীদেরকে দেখলে মনে হয় যেন গ্রামীণ মেলা চলছে। এমন মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সবার মন ছুঁয়ে যায়।
কিশোরী শারমিন আক্তার বলেন, 'গোধূলির সময় মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ ও সাদা কাশফুল যখন বাতাসে দুলতে থাকে তখন মনটা আনন্দে ভরে ওঠে।' ভ্রমণ প্রিয় কিশোর জাহিদ, সজিব ও উজ্জ্বল বলেন, 'চলমান মহামারী করোনায় আমাদের সময় কেমন যেন থমকে গেছে। ইচ্ছে করলেও দূরে কোথাও তেমন একটা বের হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু প্রকৃতি তো আর থেমে নেই। প্রকৃতি সেজেছে নতুন সাজে। তাই আমরাও ছুটে এসেছি এখানে।'
গৃহিণী মৃত্তিকা বলেন, 'কাশফুলের সমারোহে বিকেলের বাতাস যেন শীতের আগমনের বার্তা দিচ্ছে। শৈশবের স্মৃতিগুলোকেও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। এই অপরূপ সৌন্দর্যের কাছে থাকতে পেরে খুবই ভালো লাগছে।'
স্থানীয় আলোকচিত্রী আনোয়ার সাগর বলেন, 'সাদা কাশফুল ও সবুজের পাশ দিয়ে চলার অনুভুতি অন্যরকম। এখানে ছবি তুলতে এসে কাশফুলের অপরূপ সৌন্দর্য্য দেখে মনটা ভরে গেছে। তবে স্থানীয় বখাটেদের কারনে প্রায়ই কাশবনে মাদকসেবন, ছিনতাই, মেয়েদের যৌন হয়রানিসহ ঘটছে নানাধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা। তাই স্থানটিতে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি।'
সম্পাদক ও প্রকাশক মুজাহিদুল ইসলাম জাবের
𝐌𝐨𝐛𝐢𝐥𝐞: 𝟎𝟏𝟔𝟒𝟕𝟐𝟓𝟕𝟎𝟔𝟏